লালমনিরহাটের চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যাধুনিক ভবন ও সরঞ্জামসহ অপারেশন থিয়েটার থাকলেও চিকিৎসকের অভাবে তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অপারেশন থিয়েটার রুমের মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম জরাজীর্ণ হয়ে নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদিতমারী উপজেলার আট ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে রয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অপারেশন থিয়েটার। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করায় জনবলও বাড়ানো হয়েছে, তবে তা কাগজ কলমে। বাস্তবে সার্জারি, মেডিসিন, অবস ও গাইনিসহ পাঁচটি বিষয়ের জুনিয়র কনসালটেন্টের সবগুলো পদ শূন্য রয়েছে। ফলে ফোঁড়া, হাইড্রোসেল, হার্নিয়ার মতো ছোট অপারেশনের রোগীকেও সেবা দেয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাদের রেফার্ড করতে হচ্ছে।
তবে সম্প্রতি সার্জারির ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন মেডিকেল অফিসার ডা. লুৎফুন নাহার এখানে যোগদান করেছেন। তার আসার পর অপারেশন থিয়েটার রুম চালুর সিদ্ধান্ত হলেও কনসালটেন্ট অবস পদ শূন্য থাকায় তা আর বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলার গোবর্দ্ধন চর এলাকার রোগী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এ হাসপাতালে ফোঁড়া কাটার ব্যবস্থা আছে, খালি চিকিৎসক নেই। এ জন্য রেফার করে দিল। এখন ক্লিনিকে গিয়া টাকা দিয়ে কাটিয়ে নিতে হবে। সরকার তাহলে এত টাকা দিয়ে হাসপাতাল বানিয়ে কী করল যদি চিকিৎসকই না থাকে। আর হাসপাতাল করেইবা লাভ কী?’
এ করুণ চিত্র লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও। জেলায় সরকারিভাবে শুধুমাত্র সদর হাসপাতালে অপারেশন করা হচ্ছে। আর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটার রুমগুলো শুরু থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীদের সিজারিয়ানসহ ছোট-বড় সব ধরনের অপারেশনের জন্য ক্লিনিকে ছুটতে হচ্ছে। সরকারি চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হওয়ায় বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি হতে হচ্ছে। গরিবরা জমি বিক্রি করে প্রসূতি মায়ের সিজারিয়ানের বিল পরিশোধ করছেন।
পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা গ্রামের আজিয়ার রহমান বলেন, ‘হাইড্রোসিলের ব্যথায় পাটগ্রাম হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু এ হাসপাতালে অপারেশনের চিকিৎসক নেই। তারা অপারেশন করার কথা বলে রেফার্ড করে দিয়েছেন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে। বাধ্য হয়ে বাইরের ক্লিনিকে ৭ হাজার টাকা খরচ করে অপারেশন করিয়েছি।’
জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘বিশেষ করে সার্জারি ও অবস কনসালটেন্ট না থাকায় চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওটি প্রায় জন্মলগ্ন থেকে বন্ধ রয়েছে। ওটি রুমে সবকিছু দেয়া আছে। প্রয়োজন শুধু অবস ও সার্জারি কনসালটেন্ট। জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয় ও অধিপ্তরে নিয়মিত চিঠি পাঠানো হলেও কাজে আসছে না।’